(২০) ত্ব-হা | (20) Ta-Ha | سورة طه-অনুবাদ/তাফসীর (2024)

সূরাঃ ২০/ ত্ব-হা | Ta-Ha | سورة طه আয়াতঃ ১৩৫ মাক্কী

শানে নুযুল, তিলাওয়াত ও সার্চ

শানে নুযুল

তিলাওয়াত

আয়াত সার্চ

শানে নুযূল: (২০) ত্ব-হা

তাফসীরের জাকারিয়া

সূরা সম্পর্কেঃ

আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু এ সূরা এবং আরো কয়েকটি সূরা সম্পর্কে বলেছেনঃ “বনী ইসরাইল, আল-কাহফ, মারইয়াম, ত্বা-হা এবং আম্বিয়া এগুলো আমার সবচেয়ে প্রাচীন সম্পদ বা সর্বপ্রথম পুঁজি। [বুখারীঃ ৪৭৩৯] এর অর্থ, প্রাচীন সূরাসমূহের মধ্যে এগুলো অন্যতম। তাছাড়া সূরা ত্বা-হা, আল-বাকারাহ ও আলে-ইমরান সম্পর্কে এসেছে যে, এগুলোতে মহান আল্লাহর সবচেয়ে বড় ও সম্মানিত নাম রয়েছে যার অসীলায় দোআ করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। [ইবনে মাজাহ: ৩৮৫৬]

আহসানুল বায়ান

সূরা ত্ব-হা [1]

(মক্কায় অবতীর্ণ)
[1] হযরত উমার (রাঃ)-এর ইসলাম গ্রহণের বিভিন্ন কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। কোন কোন ইতিহাসের বর্ণনায় নিজ ভগিনী ও ভগিনীপতির ঘরে সূরা ত্বহা শুনে আকৃষ্ট হওয়ার কথারও উল্লেখ আছে। (ফাতহুল কাদীর)

কুরআনের আয়াতের এডভান্স সার্চ করতে

একটি নির্ধারিত সূরার যে কোন আয়াতে যেতে

অথবা

যে কোন সূরার যে কোন আয়াতে যেতে

২০:১ طٰهٰ ۚ﴿۱﴾

طه ﴿۱﴾

ত্ব-হা আল-বায়ান

ত্ব-হা-। তাইসিরুল

ত্ব-হা মুজিবুর রহমান

Ta, Ha. Sahih International

১. ত্বা-হা,(১)

(১) ত্বা-হা শব্দটি হুরুফে মুকাত্তাআতের অন্তর্ভুক্ত। যেগুলো সম্পর্কে পূর্বেই বলা হয়েছে যে, এর প্রকৃত অর্থ মহান আল্লাহ্ই ভাল জানেন। তবে উম্মতের সত্যনিষ্ঠ আলেমগণ এর কিছু অর্থ বৰ্ণনা করেছেন। যেমন, হে মানব! অথবা হে পুরুষ। কাযী ইয়াদ বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতের সালাতে এক পায়ের উপর ভর করে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। যা তার জন্য অনেক কষ্টের কারণ হয়ে পড়েছিল। ফলে এ সম্বোধনের মাধ্যমে বলা হচ্ছে যে, যমীনের সাথে মিশে থাকেন অর্থাৎ দু'পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়ে অথবা বসে বসেও আপনি কুরআন তেলাওয়াত করতে পারেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(১) ত্ব-হা-।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

আমি তোমার প্রতি আল-কুরআন এজন্য নাযিল করিনি যে, তুমি দুর্ভোগ পোহাবে আল-বায়ান

তোমাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন নাযিল করিনি। তাইসিরুল

তোমাকে ক্লেশ দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি। মুজিবুর রহমান

We have not sent down to you the Qur'an that you be distressed Sahih International

২. আপনি কষ্ট-ক্লেশে পতিত হন- এ জন্য আমরা আপনার প্রতি কুরআন নাযিল করিনি;(১)

(১) لِتَشْقَىٰ শব্দটি شقاء থেকে উদ্ভূত। এর অর্থ ক্লেশ, পরিশ্রম ও কষ্ট। [ফাতহুল কাদীর] অর্থাৎ কুরআন নাযিল করে আমি আপনার দ্বারা এমন কোন কাজ করাতে চাই না যা আপনার পক্ষে করা অসম্ভব। কুরআন নাযিলের সূচনাভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাহাজ্জুদের সালাতে কুরআন তিলাওয়াতে মশগুল থাকতেন। তিনি পরপর দীর্ঘক্ষণ সালাত আদায়ের জন্য এক পায়ে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে সালাত আদায় করতেন, পরে অন্য পায়ে ভর দিয়ে সালাত আদায় করতেন। ফলে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর পা ফুলে যায়। কাফের মুশরিক কুরাইশরা বলতে থাকে যে, এ কুরআন মুহাম্মাদকে কষ্টে নিপতিত করার জন্যই নাযিল হয়েছে। [ইবন কাসীর]

আয়াতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এই উভয়বিধ ক্লেশ থেকে উদ্ধার করার জন্য বলা হয়েছে; আপনাকে কষ্ট ও পরিশ্রমে ফেলার জন্য আমি কুরআন নাযিল করিনি। যারা আখেরাত ও আল্লাহর আযাবকে ভয় করে আল্লাহর আদেশ নিষেধ মেনে চলে তাদের জন্য এ কুরআন উপদেশবাণী। তারাই এর মাধ্যমে হেদায়াত লাভ করতে পারে। অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, “কাজেই যে আমার শাস্তিকে ভয় করে তাকে উপদেশ দান করুন কুরআনের সাহায্যে।” [সূরা কাফ: ৪৫] আরও এসেছে, “আপনি শুধু তাকেই সতর্ক করতে পারেন যে উপদেশ তথা কুরআনকে মেনে চলে এবং না দেখে দয়াময় আল্লাহকে ভয় করে।” [সূরা ইয়াসীন; ১১] কাতাদাহ রাহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আয়াতের অর্থ- আল্লাহর শপথ করে বলছি, তিনি এ কুরআনকে দুর্ভোগা বানানোর জন্য নাযিল করেননি বরং তিনি তা নাযিল করেছেন রহমত, নূর ও জান্নাতের প্রতি পথপ্রদর্শক হিসেবে। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(২) তোমাকে কষ্ট দেয়ার জন্য আমি তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করিনি।[1]

[1] এর অর্থ আমি কুরআন এই জন্য অবতীর্ণ করিনি যে, তুমি তাদের কুফরী করা ও ঈমান না আনার দুঃখে নিজেকে কষ্টে ফেলবে এবং আফসোস ও দুঃশ্চিন্তা করবে যেমন এই আয়াতে ইঙ্গিত করা হয়েছে,{فَلَعَلَّكَ بَاخِعٌ نَّفْسَكَ عَلَى آثَارِهِمْ إِن لَّمْ يُؤْمِنُوا بِهَذَا الْحَدِيثِ أَسَفًا} অর্থাৎ, তারা এই বাণী বিশ্বাস না করলে তাদের পিছনে পিছনে ঘুরে সম্ভবতঃ তুমি দুঃখে আত্মবিনাশী হয়ে পড়বে। (সূরা কাহ্ফঃ ৬) বরং আমি তো কুরআনকে নসীহত ও স্মারকগ্রন্থ হিসাবে অবতীর্ণ করেছি; যাতে প্রত্যেক মানুষের অন্তরে তওহীদ (একতত্ত্ববাদ)এর যে প্রেরণা সুপ্ত আছে তা জাগ্রত হয়। এখানে شَقَاء এর অর্থঃ কষ্ট ও ক্লান্তি।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৩ اِلَّا تَذۡكِرَۃً لِّمَنۡ یَّخۡشٰی ۙ﴿۳﴾

الا تذكرۃ لمن یخشی ﴿۳﴾

বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ স্বরূপ। আল-বায়ান

বরং তা (নাযিল করেছি) কেবল সতর্কবাণী হিসেবে যে (আল্লাহকে) ভয় করে তার জন্য। তাইসিরুল

বরং যারা ভয় করে তাদের উপদেশার্থে – মুজিবুর রহমান

But only as a reminder for those who fear [Allah] - Sahih International

৩. বরং যে ভয় করে তার জন্য উপদেশ হিসেবে,(১)

(১) মুআবিয়া রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বৰ্ণিত হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ ‘আল্লাহ্ যার কল্যাণ ইচ্ছা করেন, তাকে দ্বীনের বিশেষ জ্ঞান ও বুৎপত্তি দান করেন।” [বুখারীঃ ৭১, মুসলিমঃ ১০৩৭] কিন্তু এখানে সেসব জ্ঞানীকেই বোঝানো হয়েছে, যাদের মধ্যে কুরআন বর্ণিত ইলমের লক্ষণ অর্থাৎ আল্লাহর ভয় বিদ্যমান আছে। সুতরাং কুরআন নাযিল করে তাকে কষ্টে নিপতিত করা হয়নি। বরং তার জন্য অনেক কল্যাণ চাওয়া হয়েছে। আল্লাহর কিতাব নাযিল হওয়া, তার রাসূলদেরকে প্রেরণ করা তাঁর বান্দাদের জন্য রহমত। এর মাধ্যমে তিনি যারা আল্লাহকে স্মরণ করতে চায় তাদেরকে স্মরণ করার সুযোগ দেন, কিছু লোক এ কিতাব শুনে উপকৃত হয়। এটা এমন এক স্মরনিকা যাতে তিনি তার হালাল ও হারাম নাযিল করেছেন। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৩) বরং এমন ব্যক্তিকে উপদেশ দেওয়ার জন্য যে (আল্লাহকে) ভয় করে।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৪ تَنۡزِیۡلًا مِّمَّنۡ خَلَقَ الۡاَرۡضَ وَ السَّمٰوٰتِ الۡعُلٰی ؕ﴿۴﴾

تنزیلا ممن خلق الارض و السموت العلی ﴿۴﴾

যিনি যমীন ও সুউচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট থেকে অবতীর্ণ। আল-বায়ান

যিনি পৃথিবী ও সুউচ্চ আকাশ সৃষ্টি করেছেন তাঁর নিকট হতে তা নাযিল হয়েছে। তাইসিরুল

যিনি সমুচ্চ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন এটা তাঁর নিকট হতে অবতীর্ণ। মুজিবুর রহমান

A revelation from He who created the earth and highest heavens, Sahih International

৪. যিনি যমীন ও সমুচ্চ আসমানসমূহ সৃষ্টি করেছেন তাঁর কাছ থেকে এটা নাযিলকৃত,

-

তাফসীরে জাকারিয়া

(৪) এটা তাঁর নিকট হতে অবতীর্ণ; যিনি সমুচ্চ আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন।

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৫ اَلرَّحۡمٰنُ عَلَی الۡعَرۡشِ اسۡتَوٰی ﴿۵﴾

الرحمن علی العرش استوی ﴿۵﴾

পরম করুণাময় আরশের ওপর উঠেছেন* । আল-বায়ান

‘আরশে দয়াময় সমুন্নত আছেন। তাইসিরুল

দয়াময় (আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত। মুজিবুর রহমান

The Most Merciful [who is] above the Throne established. Sahih International

* এ আয়াতে আল্লাহর একটি ক্রিয়াবাচক গুণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। সেটি হচ্ছে استواء বা আরশের উপর উঠা। ইমাম মালেককে এ গুণ সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, استواء এর অর্থ জানা আছে। তবে তার ধরন (كيفيت) জানা নেই। এর প্রতি ঈমান রাখা ওয়াজিব এবং ধরন সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা বিদআত। এ নীতিটি আল্লাহর সকল গুণের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।

৫. দয়াময় (আল্লাহ) আরশের উপর উঠেছেন,(১)

(১) আল্লাহ্ তা'আলা আরশের উপর উঠেছেন বলে তিনি নিজেই ঘোষণা করেছেন। এর উপর বিশ্বাস রাখা ফরয। তিনি কিভাবে আরশে উঠেছেন সেটার ধরণ আমাদের জানা নেই। এটা ঈমান বিল গায়েবের অংশ। এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা সূরা বাকারার ২৯ নং আয়াতের ব্যাখ্যায় করা হয়েছে।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৫) পরম দয়াময় আরশে সমাসীন। [1]

[1] তিনি আরশে সমাসীন; যেভাবে তাঁর মাহাত্ম্যের সাথে শোভনীয়। কিভাবে বা কিরূপে তা কারো জানা নেই। এই আরশ বা মহাসন আল্লাহর সবচেয়ে বড় সৃষ্টি। সর্বোচ্চ জান্নাত ফিরদাউসের উপরে বিদ্যমান। যার পায়া ও প্রান্ত আছে, ছায়া আছে।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৬ لَهٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ وَ مَا بَیۡنَهُمَا وَ مَا تَحۡتَ الثَّرٰی ﴿۶﴾

لهٗ ما فی السموت و ما فی الارض و ما بینهما و ما تحت الثری ﴿۶﴾

যা আছে আসমানসমূহ, যমীন ও এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে এবং যা আছে মাটির নিচে সব তাঁরই। আল-বায়ান

যা আকাশসমূহে আছে, যা যমীনে আছে, যা এ দু’য়ের মাঝে আছে আর যা ভূগর্ভে আছে সব তাঁরই। তাইসিরুল

যা আছে আকাশমন্ডলীতে, পৃথিবীতে, এ দু’য়ের অন্তর্বতী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই। মুজিবুর রহমান

To Him belongs what is in the heavens and what is on the earth and what is between them and what is under the soil. Sahih International

৬. যা আছে আসমানসমূহে ও যমীনে এবং এ দু’য়ের মধ্যবর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে(১) তা তাঁরই।

(১) আদ্র ও ভেজা মাটিকে ثرى বলা হয়, যা মাটি খনন করার সময় নীচ থেকে বের হয়। অর্থাৎ সাত যমীনের নিচে। কেননা এ মাটি সাত যমীনের নিচে অবস্থিত। [জালালাইন] একথা স্বীকার করা ছাড়া গত্যন্তর নেই যে, মাটির অভ্যন্তরের জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তা'আলারই বিশেষ গুণ। তিনি আরশের উপর থেকেও সব জায়গার খবর রাখেন। তাঁর অগোচরে কিছুই নেই। আসমানসমূহ ও যমীনের অভ্যন্তরের যাবতীয় বিষয়াদি তাঁর জানা রয়েছে। কারণ, সবকিছু তাঁরই রাজত্বের অংশ, তাঁর কব্জায়, তাঁর কর্তৃত্বে, তাঁর ইচ্ছা ও হুকুমের অধীন। আর তিনিই এগুলো সৃষ্টি করেছেন, তিনিই মালিক, তিনিই ইলাহ, তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই, কোন রব নেই। [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৬) যা আছে আকাশমন্ডলীতে, পৃথিবীতে, এই দুয়ের অন্তর্বর্তী স্থানে ও ভূগর্ভে তা তাঁরই। [1]

[1] ثَرَى ভূগর্ভঃ পৃথিবীর সর্বনিম্ন জায়গা, অর্থাৎ পাতাল।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৭ وَ اِنۡ تَجۡهَرۡ بِالۡقَوۡلِ فَاِنَّهٗ یَعۡلَمُ السِّرَّ وَ اَخۡفٰی ﴿۷﴾

و ان تجهر بالقول فانهٗ یعلم السر و اخفی ﴿۷﴾

আর যদি তুমি উচ্চস্বরে কথা বল তবে তিনি গোপন ও অতি গোপন বিষয় জানেন। আল-বায়ান

যদি তুমি উচ্চকণ্ঠে কথা বল (তাহলে জেনে রেখ) তিনি গুপ্ত ও তদপেক্ষাও গুপ্ত বিষয় জানেন। তাইসিরুল

তুমি যদি উচ্চ কন্ঠে বল, তিনি যা গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন। মুজিবুর রহমান

And if you speak aloud - then indeed, He knows the secret and what is [even] more hidden. Sahih International

৭. আর যদি আপনি উচ্চকণ্ঠে কথা বলেন, তবে তিনি তো যা গোপন ও অতি গোপন সবই জানেন।(১)

(১) মানুষ মনে যে গোপন কথা রাখে, কারো কাছে তা প্রকাশ করে না, তাকে বলা হয় سر পক্ষান্তরে أخفى বলে সে কথা বোঝানো হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত মনেও আসেনি, ভবিষ্যতে কোন সময় আসবে। আল্লাহ তা’আলা এসব বিষয় সম্পর্কেও সম্যক ওয়াকিফহাল। [ইবন কাসীর] অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, “বলুন, এটা তিনিই নাযিল করেছেন যিনি আসমানসমূহ ও যমীনের সমুদয় রহস্য জানেন; নিশ্চয়ই তিনি পরম ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” [সূরা আল-ফুরকান: ৬] সমস্ত সৃষ্টি তাঁর কাছে একই সৃষ্টির মত। এ সবের জ্ঞান তাঁর পরিপূর্ণভাবে রয়েছে। আল্লাহ বলেন, “তোমাদের সবার সৃষ্টি ও পুনরুত্থান একটি প্রাণীর সৃষ্টি ও পুনরুত্থানেরই অনুরূপ। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সম্যক দ্রষ্টা।” [সূরা লুকমান: ২৮] [ইবন কাসীর]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৭) তুমি যদি উচ্চস্বরে কথা বল, তাহলে তিনি তো গুপ্ত ও অব্যক্ত সবই জানেন। [1]

[1] অর্থাৎ, আল্লাহর যিকর অথবা তাঁর নিকট দু’আ ও প্রার্থনা উচ্চশব্দে করার প্রয়োজন নেই। কারণ তিনি তো গোপন থেকে গোপনতর কথাও শুনেন ও জানেন। অথবা أَخفَى শব্দের অর্থ হল আল্লাহ তাআলা ঐ সমস্ত কথা সম্পর্কেও অবহিত যা তিনি তকদীরে লিখে দিয়েছেন, কিন্তু মানুষের নিকট এখনও প্রকাশ করেননি। অর্থাৎ কিয়ামত পর্যন্ত ঘটিতব্য সকল ঘটনা সম্পর্কে তিনি পরিজ্ঞাত।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৮ اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ ؕ لَهُ الۡاَسۡمَآءُ الۡحُسۡنٰی ﴿۸﴾

الله لا اله الا هو له الاسمآء الحسنی ﴿۸﴾

আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন (সত্য) ইলাহ নেই; সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। আল-বায়ান

আল্লাহ, তিনি ব্যতীত সত্যিকারের কোন ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই। তাইসিরুল

আল্লাহ! তিনি ছাড়া অন্য কোন মা‘বূদ নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। মুজিবুর রহমান

Allah - there is no deity except Him. To Him belong the best names. Sahih International

৮. আল্লাহ্‌, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য ইলাহ নেই, সুন্দর নামসমূহ তাঁরই।(১)

(১) এ আয়াতটিতে তাওহীদকে সুন্দরভাবে ফুটে তোলা হয়েছে। এখানে প্রথমেই মহান আল্লাহর নাম উল্লেখ করে তাঁর পরিচয় দেয়া হয়েছে যে, তিনি ব্যতীত সত্য কোন ইলাহ নেই। তারপর বলা হয়েছে যে, সুন্দর সুন্দর যত নাম সবই তাঁর। আর এটা সুবিদিত যে, যার যত বেশী নাম তত বেশী গুণ। আর সে-ই মহান যার গুণ বেশী। আল্লাহর প্রতিটি নামই অনেকগুলো গুণের ধারক। কুরআন ও হাদীসে আল্লাহর অনেক নাম ও গুণ বর্ণিত হয়েছে। তার নাম ও গুণের কোন সীমা ও শেষ নেই। কোন কোন হাদীসে এসেছে যে, মহান আল্লাহর এমন কিছু নাম আছে যা তিনি কাউকে না জানিয়ে তার ইলমে গায়েবের ভাণ্ডারে রেখে দিয়েছেন।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে কেউ কোন বিপদে পড়ে নিন্মোক্ত দোআ, পাঠ করবে। মহান আল্লাহ তাকে তা থেকে উদ্ধার করবেন সেটি হচ্ছে: হে আল্লাহ! আমি আপনার দাস এবং আপনারই এক দাস ও আরেক দাসীর পুত্র। আমার ভাগ্য আপনারই হাতে, আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর। আমার প্রতি আপনার ফয়সালা ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। আমি আপনার যে সমস্ত নাম আপনি আপনার জন্য রেখেছেন অথবা আপনার যে নাম আপনি আপনার কিতাবে নাযিল করেছেন বা আপনার সৃষ্টি জগতের কাউকেও শিখিয়েছেন অথবা আপন ইলমে গাইবের ভাণ্ডারে সংরক্ষণ করে রেখেছেন সে সমস্ত নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি আপনি কুরআনকে করে দিন আমার হৃদয়ের জন্য প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি, আমার চিন্তা ভাবনার অপসারণকারী এবং উৎকণ্ঠা দূরকারী।“ [সহীহ ইবন হিব্বান: ৩/২৫৩, মুসনাদে আহমাদ: ১/৩৯১]

তবে কোন কোন হাদীসে এ সমস্ত নামের মধ্যে ৯৯টি নামের সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, সেগুলো সঠিকভাবে অনুধাবন করে সেগুলো দ্বারা আহবান জানালে জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ “অবশ্যই আল্লাহর ৯৯টি নাম রয়েছে। কেউ সঠিকভাবে সেগুলোর মাধ্যমে আহবান করলে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ [বুখারী: ২৭৩৬, মুসলিম: ২৬৭৭] কিন্তু এর অর্থ এ নয় যে, শুধু এ ৯৯টিই আল্লাহর নাম, বরং এখানে আল্লাহর নামগুলোর মধ্য থেকে ৯৯টি নামের ফযীলত বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য।

তাফসীরে জাকারিয়া

(৮) আল্লাহ, তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) উপাস্য নেই, সমস্ত উত্তম নাম তাঁরই। [1]

[1] অর্থাৎ, উপাস্য (ইবাদতের যোগ্য) তিনিই, যিনি উপরোক্ত গুণাবলীর অধিকারী। আর তাঁর সুন্দর নামাবলীও আছে, যা দ্বারা তাঁকে আহবান করা হয়। উপাস্য তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নয়, না তাঁর মত সুন্দর নাম কারো আছে। অতএব তাঁকে সঠিকভাবে জানা, তাঁকেই ভয় করা উচিত, তাঁকেই ভালবাসা উচিত, তাঁকেই বিশ্বাস করা উচিত এবং তাঁরই আজ্ঞা পালন করা উচিত। যাতে মানুষ যেদিন তাঁর নিকট ফিরে যাবে সেদিন লজ্জিত না হয়; বরং তাঁর কৃপা ও ক্ষমা লাভ করে আনন্দিত এবং তাঁর সন্তুষ্টি লাভ করে সৌভাগ্যবান ও সুখী হয়।

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:৯ وَ هَلۡ اَتٰىكَ حَدِیۡثُ مُوۡسٰی ۘ﴿۹﴾

و هل اتىك حدیث موسی ﴿۹﴾

আর তোমার কাছে কি মূসার কথা পৌঁছেছে? আল-বায়ান

মূসার কাহিনী তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? তাইসিরুল

মূসার বৃত্তান্ত তোমার কাছে পৌঁছেছে কি? মুজিবুর রহমান

And has the story of Moses reached you? - Sahih International

৯. আর মূসার বৃত্তান্ত আপনার কাছে পৌছেছে কি?(১)

(১) পূৰ্ববতী আয়াতসমূহে কুরআনুল করীমের মাহাত্ম্য এবং সে প্রসঙ্গে রাসূলের মাহাত্ম্য বর্ণিত হয়েছে। এরপর আলোচ্য আয়াতসমূহে মূসা আলাইহিস সালাম-এর কাহিনী বর্ণনা করা হয়েছে। উভয় বিষয়বস্তুর পারস্পরিক সম্পর্ক এই যে, রেসালাত ও দাওয়াতের কর্তব্য পালনের পথে যেসব বিপদাপদ ও কষ্টের সম্মুখীন হতে হয় এবং পূৰ্ববতী নবীগণ যেসব কষ্ট সহ্য করেছেন, সেগুলো মহানবী সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর জানা থাকা দরকার যাতে তিনি পূর্ব থেকেই এসব বিপদাপদের জন্য প্ৰস্তুত হয়ে অবিচল থাকতে পারেন। যেমন, অন্য এক আয়াতে বলা হয়েছেঃ (وَكُلًّا نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنْبَاءِ الرُّسُلِ مَا نُثَبِّتُ بِهِ فُؤَادَكَ) অর্থাৎ “আমি নবীগণের এমন কাহিনী আপনার কাছে এজন্য বর্ণনা করি, যাতে আপনার অন্তর সুদৃঢ় হয়।” [সূরা হুদঃ ১২০]

তাফসীরে জাকারিয়া

(৯) মূসার বৃত্তান্ত তোমার কাছে পৌঁছেছে কি?

-

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

২০:১০ اِذۡ رَاٰ نَارًا فَقَالَ لِاَهۡلِهِ امۡكُثُوۡۤا اِنِّیۡۤ اٰنَسۡتُ نَارًا لَّعَلِّیۡۤ اٰتِیۡكُمۡ مِّنۡهَا بِقَبَسٍ اَوۡ اَجِدُ عَلَی النَّارِ هُدًی ﴿۱۰﴾

اذ را نارا فقال لاهله امكثوا انی انست نارا لعلی اتیكم منها بقبس او اجد علی النار هدی ﴿۱۰﴾

যখন সে আগুন দেখল, তখন নিজ পরিবারকে বলল, ‘তোমরা অপেক্ষা কর, আমি আগুন দেখতে পেয়েছি, আশা করি আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত আঙ্গার নিয়ে আসতে পারব অথবা আগুনের নিকট পথনির্দেশ পাব।’ আল-বায়ান

যখন সে আগুন দেখল (মাদ্ইয়ান থেকে মিসর যাবার পথে), তখন সে তার পরিবারবর্গকে বলল, ‘তোমরা এখানে অবস্থান কর, আমি আগুন দেখেছি, সম্ভবতঃ আমি তাত্থেকে তোমাদের জন্য কিছু জ্বলন্ত আগুন আনতে পারব কিংবা আগুনের নিকট পথের সন্ধান পাব। তাইসিরুল

সে যখন আগুন দেখল তখন তার পরিবারবর্গকে বললঃ তোমরা এখানে থাক আমি আগুন দেখেছি; সম্ভবতঃ আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারবো অথবা ওর নিকটে কোন পথ প্রদর্শক পাব। মুজিবুর রহমান

When he saw a fire and said to his family, "Stay here; indeed, I have perceived a fire; perhaps I can bring you a torch or find at the fire some guidance." Sahih International

১০. তিনি যখন আগুন দেখলেন তখন তাঁর পরিবারবর্গকে বললেন, তোমরা অপেক্ষা কর, আমি তো আগুন দেখেছি। সম্ভবত আমি তোমাদের জন্য তা থেকে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারব অথবা আমি আগুনের কাছে ধারে কোন পথনির্দেশ পাব।(১)

(১) মনে হচ্ছে তখন সময়টা ছিল শীতকালের একটি রাত। খুব অন্ধকার একটি রাত। [কুরতুবী] মুসা আলাইহিস সালাম সিনাই উপদ্বীপের দক্ষিণ এলাকা অতিক্রম করছিলেন। দূর থেকে একটি আগুন দেখে তিনি মনে করেছিলেন সেখান থেকে কিছু আগুন পাওয়া যাবে যার সাহায্যে পরিবারের লোকজনদের সারারাত গরম রাখার ব্যবস্থা হবে অথবা কমপক্ষে সামনের দিকে অগ্রসর হবার পথের সন্ধান পাওয়া যাবে। এখানে এসেছে যে, তিনি পরিবারকে বলেছিলেন যে, আমি যাচ্ছি যাতে আমি জুলন্ত অঙ্গর আনতে পারি। অন্য আয়াতে এসেছে, একখণ্ড জ্বলন্ত কাঠ আনতে পারি যাতে তোমরা আগুন পোহাতে পার। [সূরা আল-কাসাস: ২৯]

এর দ্বারা বোঝা গেল যে, রাতটি ছিল প্রচণ্ড শীতের। তারপর বলেছেন যে, অথবা আমি পথের সন্ধান পাব। এর দ্বারা বুঝা গেল যে, তিনি পথ হারিয়ে ফেলেছিলেন। যখন আগুন দেখলেন, তখন ভাবলেন, যদি কাউকে পথ দেখানোর মত নাও পাই, সেখান থেকে আগুন নিয়ে আসতে পারব। [ইবন কাসীর] তিনি দুনিয়ার পথের সন্ধান পাওয়ার কথা চিন্তা করেছিলেন আর পেয়ে গেলেন সেখানে আখেরাতের পথ।

তাফসীরে জাকারিয়া

(১০) সে যখন আগুন দেখল, তখন তার পরিবারবর্গকে বলল, ‘তোমরা এখানে অবস্থান কর। আমি আগুন দেখেছি; সম্ভবতঃ আমি তোমাদের জন্য তা হতে কিছু জ্বলন্ত অঙ্গার আনতে পারব অথবা ওর নিকট কোন পথ প্রদর্শক পাব।’ [1]

[1] এ ঘটনা ঐ সময়কার যখন হযরত মূসা (আঃ) মাদয়্যান হতে আপন স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে (একটি মতানুসারে যিনি শুআইব (আঃ)-এর কন্যা ছিলেন) নিজের মাতার নিকট ফিরে যাচ্ছিলেন। রাত্রি ছিল অন্ধকার এবং রাস্তাও ছিল অজানা। কোন কোন ব্যাখ্যাতার কথানুসারে স্ত্রীর প্রসবের সময় ছিল আসন্ন এবং তাঁর জন্য আগুনের প্রয়োজন ছিল। কিংবা শীতের কারণে তাপ তথা আগুনের প্রয়োজন বোধ হয়। এমতাবস্থায় দূর হতে তাঁরা আগুনের শিখা দেখতে পান। পরিবারকে অর্থাৎ স্ত্রীকে, (কেউ কেউ বলেন, সঙ্গে চাকর ও শিশুও সঙ্গে ছিল, যার কারণে বহুবচন শব্দ ব্যবহূত হয়েছে।) বললেন, ‘তোমরা এখানে অপেক্ষা কর। আমি আশা করি সেখান হতে আগুন সংগ্রহ করব অথবা কমসে কম সেখান হতে পথের সন্ধান পাব।’

তাফসীরে আহসানুল বায়ান

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১৩৫ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 · · · 11 12 13 14 পরের পাতা »

(২০) ত্ব-হা | (20) Ta-Ha  | سورة طه-অনুবাদ/তাফসীর (2024)

References

Top Articles
Latest Posts
Recommended Articles
Article information

Author: Ray Christiansen

Last Updated:

Views: 5323

Rating: 4.9 / 5 (49 voted)

Reviews: 80% of readers found this page helpful

Author information

Name: Ray Christiansen

Birthday: 1998-05-04

Address: Apt. 814 34339 Sauer Islands, Hirtheville, GA 02446-8771

Phone: +337636892828

Job: Lead Hospitality Designer

Hobby: Urban exploration, Tai chi, Lockpicking, Fashion, Gunsmithing, Pottery, Geocaching

Introduction: My name is Ray Christiansen, I am a fair, good, cute, gentle, vast, glamorous, excited person who loves writing and wants to share my knowledge and understanding with you.